জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম - জমি বন্ধক চুক্তি পত্র

আমাদের দেশে এখন জমি বন্ধকের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে গেছে। আপনাদের মধ্যে অনেকেরই জমি বন্ধক রাখার প্রয়োজন হয় সেটা বাড়ি জমি হোক বা ফসলের জমি হোক। আপনারা অনেক সময় জমি বন্ধকের লেখাপড়া না করেই জমির টাকা নিয়ে অন্যের হাতে ছেড়ে দেন এতে করে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আপনারা যদি জমি বন্ধক রাখতে চান তাহলে আপনাদেরকে সর্বপ্রথম জমি বন্ধক নামা লিখে জমি বন্ধক রাখা প্রয়োজন।

তাই আজকের এই পুরো পোস্টটিতে আমরা আলোচনা করব আপনারা কিভাবে জমি কারো আছে বন্ধক রাখলে তা বন্ধক নামা লিখবেন এবং জমির বন্ধকের চুক্তিপত্র কিভাবে লিখবেন। আপনাদের মধ্যে যারা জমি বন্দুক নামা কিভাবে লিখে তা জানতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

আর্টিকেল সূচি পত্রঃ-

জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম জেনে নিনঃ-

আমরা সাধারণত অনেক জমি বন্ধক দিয়ে এবং বন্ধক নিয়ে থাকি। বন্ধক বা রেহানের মূল্য নির্বিশেষ দলিল জমা দেওয়া রেহেন ব্যতীত অন্যান্য রেহেন কেবলমাত্র দলিলদাতা কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও দুজন সাক্ষী কর্তৃক প্রত্যয়িত রেজিস্ট্রি দলিল দ্বারাই সম্পাদনা করা যেতে পারে। মূল্যনির্বিশেষে উক্তরূপ স্বাক্ষরিত ও প্রত্যয়িত দলিল দ্বারা অথবা সাধারণ রেহেন ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্পত্তির দখল অর্পণ দ্বারা রেহেন কার্যকর করা যেতে পারে।

সাধারণত আমরা জমি বন্ধক নেওয়া এবং রাখার সময় জমির দলিল এবং স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে জমি বন্ধক রাখি এবং নিয়ে থাকি। আমরা যদি জমি বন্ধক রাখার সময় যে ব্যাক্তি জমি বন্ধক নিবে তার কাছে জমির দলিল না দেওয়া হয় তাহলে জমি বন্ধক নেওয়া হয় না। আমরা যদি জমির দলিল এবং স্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষর করে জমি বন্ধক রাখি এবং বন্দক নিয়ে যদি তাতে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো।

আর এমন এমন ব্যক্তি আছে যারা জমি বন্ধক নিয়ে অস্বীকার যায় এবং অনেক গ্যাঞ্জামের সৃষ্টি করে। আবার কিছু কিছু ব্যক্তি রয়েছে জমি বন্ধক রেখে অস্বীকার যায় এবং গ্যাঞ্জামের সৃষ্টি করে। তাই আমরা যদি জমি বন্ধক নিয়ে এবং অন্যজনের কাছে বন্ধক দিয়ে থাকি তাহলে আমরা জমির দলিল এবং স্টাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষর করে নেব।

জমি বন্ধক নামা চুক্তি পত্র কিভাবে লেখা হয়ঃ-

আমি দ্বিতীয় পক্ষ মোঃ খাইরুল ইসলাম এই মুহূর্তে টাকার বিশেষ প্রয়োজনহওয়া এবংকোন উপায় না পাইয়া আমার ৭০ শতক আবাদি জমি যাহার মৌজঃ রায়পুর যে, এল, নং: ৭০খতিয়ান নং: ৪৩৭০ সাবেক: ৭২০ নতুন: ১৬ দাগ নং: ২৮, সাবেক:৪৫৬, নতুন:৭৬৫ বন্ধক রাখার প্রস্তাব করিলে প্রথম পক্ষ উহা বন্ধক গ্রহণ করিতে সম্মতি হন।

উক্ত জমি বিপরীতে ৯০,০০০ হাজার টাকা একযোগে বুঝাইয়া পাইয়াছি উক্ত জমি বন্ধক তিন বছরের জন্য। উপস্থিত সাক্ষী গনের সম্মুখে নিজ নাম সহি

স্ট্যাম্প জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম জানুনঃ-

পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করিয়া অত্র জমির বন্ধকনামা চুক্তিপত্রেরবয়ান শুরু করিতেছি। যেহেতু প্রথম পক্ষ নিম্নে তাফসিল বর্ণিত সম্পত্তির ওয়ারিশ সূত্রে ভোগ দখল করিয়া আসিতেছি। প্রথম পক্ষের নগদ টাকার বিশেষ প্রয়োজন হইলে দ্বিতীয় পক্ষকে নিম্নে তাফসিল বর্ণিত.... কাঠাল জমির বন্ধক দেওয়ার প্রস্তাব করলে আপনি দ্বিতীয় পক্ষ উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করিয়া নিম্নে তাফসিল বর্ণিত.... কাঁঠাল জমির বন্ধক নিতে রাজি ও সম্মতি হইয়াছেন। যেহেতু উভয়পক্ষ কতিপয় শর্তসাপেক্ষে বন্ধক নামা চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হইলাম।

আমরা যদি জমি বন্ধক রাখি তাহলে তার কিছু শর্ত বলি থাকে সেই শর্তাবলীগুলো হলোঃ-

প্রথম শর্তঃ-
প্রথম পক্ষ জমি বন্ধক কালীন সময়ে কতিপয় সাক্ষী গনের সম্মুখে যে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছিলেন তা যখন ফেরত দিতে পারবেন তখন দ্বিতীয়পক্ষ অত্র জমি প্রথম পক্ষ কে ফেরত দিতে বাধ্য থাকিবেন।

দ্বিতীয় শর্তঃ-
প্রথম পক্ষ জমি বন্ধক রাখা অবস্থায় কোনক্রমে এসে জমি অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করিতে পারবেন না যদি হস্তান্তর করেন সেই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পক্ষ আইনত ব্যবস্থা নিতে পারিবেন।

তাই আমরা যদি জমি বন্ধ নিয়ে থাকি এবং বন্ধক রাখি সেই ক্ষেত্রে আমরা স্ট্যাম্প করে এবং স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে যেগুলি শর্তাবলী এবং নিয়ম-কানুন ঠিক ওই ভাবেই আমরা জমি বন্ধক রাখবো এবং বন্ধক নিবো।

জমি বন্ধক রাখার আইন সম্পর্কে জানুনঃ-

সাধারণত আগের মানুষ নিজের সবচেয়ে দামি জিনিস বন্ধক রাখত। আমাদের যদি আর্জেন্ট বিশেষ কিছু কারণে অনেক টাকা পয়সার প্রয়োজন হয়ে থাকে তখন আমরা আমাদের সবচেয়ে দামি জিনিস বন্ধক রাখি যেমন জমি কিংবা গহনা গাটি ইত্যাদি যেগুলো সবচেয়ে দামি জিনিস সেগুলো বন্ধক রেখে থাকি।
এগুলোর কিছু নিয়ম কানুন আছে আমি যদি হুটহাট করে গিয়ে কোন কিছু বন্ধক রাখে তার কোন ডকুমেন্ট এবং দলিলের স্ট্যাম্প না করে যদি আমাদের দামি জিনিসগুলো বন্ধক রাখি তাহলে আমাদের অনেক অনেক সময় অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এটার বিশেষ আইন ও আছে যেমন আপনার কাছ থেকে কেউ জমি বন্ধক নিল কি আপনি বন্ধক দিলেন সে যদি আপনার কাছ থেকে দলিল যাবতীয় জমির কাগজপত্র হাতিয়ে নেয় এবং সে দাবি করে থাকে যে এটা আমার নিজস্ব জমি তাহলে আপনি সেটার জন্য আইনত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। 

কিন্তু আপনি যদি তার কাছে জমি বন্ধক দিন ঠিক আছে আপনি যদি জমির দলিল এবং তার কাছে স্টাম না করে শর্তগুলো উল্লেখ না করে সাক্ষী না রেখে যদি জমি বন্ধক দেন আর সে যদি দাবি করে এটা আমার নিজস্ব জমি তাহলে সে ক্ষেত্রে কিছু করার নাই।

বন্ধকি দলিল রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেনঃ-

আমাদের যদি কোন জমি থেকে থাকে আমরা অনেকেই সে জমি রেজিস্ট্রি করি না সেটা না করে আমরা জমিতে আবাদি ফসল করি। আমরা হয়তো সবাই জানি জমির জন্য আলাদা ট্যাক্স দিতে হয় এবং সেটা বাধ্যতামূলক দিতে হয়। এটা সাধারণত প্রতিমাসিক ট্যাক্স ধরা হয় কিন্তু আমরা সেটা না করে এক বছর পরে ১২ মাসের ট্যাক্স দিয়ে থাকি। আবার এমন ব্যক্তি আছে কেউ কেউ তিন চার বছর হয়ে যায় তাও জমি ট্যাক্স দেয় না।

আমরা যদি জমির ট্যাক্স না দেই তাহলে আমাদের জন্যই ক্ষতিকর। সাপোজ আপনার জমি আছে শুধু যেটুকু তে বসতবাড়ি করে আপনি আছেন আপনার জমি সেটুকুই এবং আপনি যদি সময়মতো সে জমির ট্যাক্স না দেন তাহলে আপনার জমি নিলামে উঠতে পারে। এবং আপনাকে শেষে জমে হারিয়ে পথে নামতে হতে পারে। তাই আমরা আমাদের যেটুকুই জমি থাক সময়মতো টেক্সট দিব এবং ট্যাক্স কখনো বাকি রাখবো না সব সময় পরিশোধ করার চেষ্টা করব।

বন্ধকি দলিল লেখার ফরমেটঃ-

আমি প্রথম পক্ষ অঙ্গীকার এবং ঘোষণা করিতেছি যে আমি প্রথম পক্ষ আপনি দ্বিতীয় পক্ষের বরাবরের বন্ধকী টাকা যখন পরিশোধ করিতে পারিব তখনই আমার দোকান ঘরটি আমি প্রথম পক্ষের বরাবরের আপনি দ্বিতীয় পক্ষ ছাড়িয়া ও বুঝিয়া দিতে বাধ্য থাকিবেন। ইহাতে আপনি দ্বিতীয় পক্ষ কোন প্রকার ও জোর আপত্তি দাবি দাওয়া ইত্যাদি কিছু করিতে পারবেন না করিলে তাহা সর্ব আইন আদালতে সর্বোচ্চভাবে আগ্রহ এবং নাম নাঞ্জুর বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
প্রকাশ থাকে যা আমি প্রথম পক্ষ আপনি দ্বিতীয় পক্ষকে বন্ধুকে টাকা ফেরত দিতে চাইলে কমপক্ষে তিন মাস পূর্বে অবহিত করতে হবে।

উল্লেখ থাকে যে আপনি দোকানঘরটির ভাড়া ভোগ করবেন যাহা মূল বন্ধ কি টাকা হইতে পরিশোধ হইতে থাকিবে। আপনি আপনার ইচ্ছামত ভাড়াটিয়া পরিবর্তন করিতে পারবেন। ইহাতে আমি প্রথম পক্ষের কোন প্রকার ও জোর আপত্তি বা দাবি দেওয়া কিছুই করতে পারিব না করলেও তাহা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে। উল্লেখ থাকে যে প্রথম পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষকে যতদিন বন্ধ কি টাকা ফেরত না দিবেন ততদিন পর্যন্ত দ্বিতীয়পক্ষ দোকান ঘরটির ভাড়া ভোগ করিবেন এবং বিদ্যুৎ বিল সাবমিটার অনুযায়ী পরিশোধ করিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

লাইফ ফ্রিল্যান্সারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url